নতুন প্রজন্মের উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্রশস্ত্রের মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বিকাশ।
ভারতীয় সেনাবাহিনী বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে একটি। যারা গতিশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝে নিজেদের শক্তিশালী করার জন্য নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তিকে দ্রুত আলিঙ্গন করছে। এরই উদাহরণস্বরূপ হল ভারতীয় সেনাবাহিনীর উন্নত অস্ত্রশস্ত্র এবং সক্ষমতা বিকাশের দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থার পরিচিতি:
ভারতীয় সেনাবাহিনীর বর্তমানে প্রধান লক্ষ্য হল উন্নত অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করা। ইতিমধ্যেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক রাইফেল, মিসাইল সিস্টেম এবং আর্টিলারি যা বৃহত্তর প্রাণঘাতী , যার লক্ষ্য নির্ভুল। AK-203 অ্যাসল্ট রাইফেল , আমেঠিতে ভারত-রাশিয়ার সহযোগিতায় ইতিমধ্যেই তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও সিগ সাউর, সুইস অরিজিন অ্যাসল্ট রাইফেলও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মেসার্স এমডিএসএল-এর যুদ্ধের সাজোয়া গাড়ি, মাউন্টেড ইনফ্যান্ট্রি মর্টার সিস্টেম (ভিএমআইএমএস)কে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
পদাতিক ব্যাটালিয়নগুলিতে উন্নত 81 মিমি মর্টার LAC বা চীনের সীমান্ত এলাকায় ব্যবহৃত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে M777 আল্ট্রা-লাইট হাউইটজার অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যেগুলি ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্টিলারি শক্তিকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করবে। জলভাগেও বর্ধিত গতিশীলতার জন্য বিশেষ গতিশীল যানবাহন সংগ্রহ করা হয়েছে।
নাইট ভিশন এবং নজরদারি সিস্টেম:
24/7 অপারেশনাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে ভারতীয়
সেনাবাহিনী ইসরায়েল থেকে হেরন টিপি ড্রোন অন্তর্ভুক্ত করেছে সেনাবাহিনীতে। যেগুলি দৃষ্টিসীমার বাইরে
এবং উন্নত নাইট ভিশন ডিভাইস (NVDs) এবং থার্মাল ইমেজিং সিস্টেমকে উন্নত করেছে ।
এরমধ্যে পদাতিক এবং সাঁজোয়া ইউনিটগুলিতে রিফ্লেক্স সাইট হলোগ্রাফিক থার্মাল ইমেজার ভিত্তিক নাইট সাইট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মানুষ ছাড়াই অটোমেটিক এরিয়াল ভেহিকেল (ইউএভি) এবং ড্রোন সহ আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা যা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে অনবদ্য ষেগুলি মোতায়েন করা হচ্ছে।
সাঁজোয়া যান এবং প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্ক:
Armoured vehicles বা যান্ত্রিক বা সাঁজোয়া বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী তার সাঁজোয়া যান এবং প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্কগুলির বহরকে উন্নত করার দিকে মনোনিবেশ করেছে। উন্নত প্রযুক্তির ফিটমেন্ট যেমন T-72 ট্যাঙ্কগুলিকে নতুন প্রজন্মের ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেমের ফিটমেন্ট দ্বারা আপগ্রেড করে বিদ্যমান সক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়েছে।
যোগাযোগ এবং নেটওয়ার্ক-কেন্দ্রিক যুদ্ধ:
আধুনিক সামরিক অভিযানের একটি মূল দিক
নেটওয়ার্ক-কেন্দ্রিক যুদ্ধ (NCW), ভারতীয় সেনাবাহিনী ডিজিটাল যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তরিত হচ্ছে
অ্যাডভান্সড ট্যাকটিক্যাল কমিউনিকেশন সিস্টেম (এটিসিএস) এবং ব্যাটলফিল্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (বিএমএস) বাস্তবায়নের মাধ্যমে। সুরক্ষিত স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর সেনাবাহিনীর ফোকাস NCW এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
রোবোটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI):
বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারতীয় সেনাবাহিনী সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে রোবোটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সম্ভাবনা অন্বেষণ করে চলেছে। রোবোটিক ব্যবহার ,বোমা নিষ্ক্রিয়করণ, লজিস্টিক এবং নজরদারির ব্যবস্থা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। রোবোটিক পশু দিয়ে ধীরে ধীরে দূরবর্তী, রুক্ষ দুর্গম এলাকায় প্রতিকূল আবহাওয়ায় কর্মদক্ষ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পশু পরিবহনকে (AT) গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা এবং যথার্থ স্ট্রাইক সিস্টেম:
যুদ্ধের হুমকির পরিবেশে সেনাবাহিনী তার ক্ষেপণাস্ত্র এবং নির্ভুল স্ট্রাইক ক্ষমতা উন্নত করার দিকে মনোনিবেশ করেছে। ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার সাথে যৌথভাবে তৈরি করে দেশের ভূখণ্ডের পরিসীমা জুড়ে নির্ভুল স্ট্রাইক ক্ষমতা শক্তিশালী করছে। তাছাড়া সেনাবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচিতে আকাশ সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম এবং এস-৪০০ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ট্রায়াম্ফ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেশের আকাশপথকে হুমকি এবং কৌশলগত প্রতিরোধ থেকে সুরক্ষিত করার ক্ষমতা আরও বাড়িয়েছে।
পদাতিক বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র এবং সৈনিক আধুনিকীকরণ প্রোগ্রাম:
ভবিষ্যতে পদাতিক সৈন্যদের হালকা ওজনের ব্যালিস্টিক হেলমেট, বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, আধুনিকভাবে সজ্জিত যোগাযোগ ডিভাইস, উন্নত বডি আর্মার এবং উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেওয়া যার লক্ষ্য হল যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের বেঁচে থাকার ক্ষমতা, গতিশীলতা এবং যুদ্ধের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা।
ভারতীয় সেনাবাহিনী নতুন প্রজন্মের অস্ত্র প্রযুক্তিকে গ্রহণ করে আধুনিক যুদ্ধে এবং ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে থাকতে চায়। ভবিষ্যতে উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা, যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মেলবন্ধন প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত শক্তির দিকে থেকে ভারতকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখবে।
Post a Comment